শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌথ অভিযান জোরদার

৯ মাস ৯ দিনে ৬৬ খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে হচ্ছে রক্তপাত, বাড়ছে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা, মাদকের বেচা-কেনা। সোমবার ভোরে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আরও ২ জনকে। এনিয়ে গত ৯ মাস ৯ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ৬৬ জন।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও মাদক রোধে জোরদার করা হয়েছে যৌথ অভিযান। এতে রবিবার মধ্যরাতে টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ে পাশে এ অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদি সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি আরগানাজেশন (আরএসও)’ এর ৩ সদস্যকে অস্ত্র ও গুলি সহ আটক করা হয়েছে।

ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন বলছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহলের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি।

সোমবার ভোর রাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ২-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-বøক এবং বালুখালী ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-৮ বøকে পৃৃথকভাবে সন্ত্রাসীর গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।

ঘটনায় নিহতরা হল- উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-২ বøকের মৃত মীর আহমদের ছেলে ছানা উল্লাহ (২৭) এবং একই ক্যাম্পের জি-বøকের আব্দুল গফুরের ছেলে আহম্মদ হোসেন (২৭)।

স্থানীয়দের বরাতে শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সোমবার ভোর রাত ৪ টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ২-ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-বøকের জনৈক মাহমুদুল হকের বসত ঘরের সামনে সিঁড়ির উপর একদল অজ্ঞাত দূর্বৃত্ত ছানা উল্লাহকে লক্ষ্য করে উপর্যুপুরি কয়েকটি গুলি ছুঁড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যুহয়েছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

সোমবার ভোর রাত ৩ টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-৮ বøকের জনৈক আলী জোহারের চায়ের দোকানের সামনে অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্ত আহম্মদ হোসেনকে উপর্যুপুরি গুলি করে খুন করে বলে জানান শেখ মোহাম্মদ আলী।

প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাটি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই ২ খুনের ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা বলেন শেখ মোহাম্মদ আলী।

এর আগে চলতি মাসের ৪ অক্টোবর আরেকটি জড়ো খুনের ঘটনা ঘটেছে ক্যাম্পে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র সংগঠন আরসা ও আরএসও’র মধ্যে সংঘর্ষে এ ২ জন নিহত হয়েছে।

এনিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত ৯ মাস ৯ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬৬ খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, ৬৬ টি খুনের মধ্যে উখিয়ার ক্যাম্পে ৫৮ জন, টেকনাফের ক্যাম্পে ৮ জন খুন হয়েছে। সোমবার ২ খুনের ঘটনা বাদ দিলে অপর ৬৪ খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৩ টি। যার মধ্যে উখিয়ায় ৪৮ টি ও টেকনাফে ৫ টি মামলা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছে কমপক্ষে ৭০ জনের বেশি। পুলিশ এসব মামলা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্যাম্প জুড়ে যৌথ অভিযান জোরদার :

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ প্রবণতা রোধে ইতিমধ্যে যৌথ অভিযান শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানের অংশ হিসেবে রবিবার মধ্য রাতে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদি সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি আরগানাজেশন (আরএসও)’ এর ৩ সদস্যকে অস্ত্র ও গুলি সহ আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ।

টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ে পাশে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ হাসান বারী নূর।

আটকরা হলেন, ওই ক্যাম্পের মনির আহমেদের ছেলে কামাল হোসেন (২৭), আবদুর শুক্কুরের ছেলে অজিউর রহমান (১৮), তাজিমুল্লার ছেলে মুজিবুর (১৮)।

উদ্ধার করা হয়েছে ৩ টি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটারগান বন্ধুক (এলজি) ও ১৪৬ রাউন্ড তাজা গুলি।

১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ হাসান বারী নূর জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিওিতে উনচিপ্রাং ক্যাম্পের সি/৫ বøকের পাহাড়ের ঢালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অস্ত্র ও গুলি সহ ৩ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়। আটকরা স্বীকার করেছে তারা আরএসও নামের রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নবাদি সংগঠনের সদস্য।

এবিপিএনের তথ্য বলছে, চলমান অভিযানে একমাসে হত্যা, অপহরণ, মাদক, অস্ত্র ও অন্যন্যা মামলায় শতাধিক আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এপিবিএন’র সঙ্গে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিলে পরিচালিত হচ্ছে এসব যৌথ অভিযান।

৮ এপিবিএনের সহ-অধিনায়ক খন্দকার ফজলে রাব্বী বলেন, অভিযানে প্রথমে ক্যাম্প নির্ধারণ করা হয়। এরপর ওই ক্যাম্পের বøকগুলো যেখানে অস্ত্রধারি বা দুষ্কৃতিকারিরা থাকতে পারে সেসব বøকগুলো চারদিকে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর বøকে বøকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ১’শ এপিবিএন সদস্য, ২ প্লাটুন বিজিবি, ২৫ জন র‌্যাব সদস্য, ২৫ জন পুলিশ সদস্য ও ২৫ জন আনসার সদস্য নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।

জামতলী ক্যাম্প ডি ২’র বাসিন্দা হাকিম বলেন, ক্যাম্পে যে খুনোখুনি, গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চললে এগুলো আমরা চায় না। ক্যাম্পে এসব অস্থিরতা বন্ধ হোক। যতদিন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে না যাচ্ছি, ততদিন যেন ক্যাম্পে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। এই নিরাপত্তা আমরা দাবি করছি। এর জন্য যৌথ অভিযানকে স্বাগত জানান তিনি।

আরেক রোহিঙ্গা আবদুর রহমান বলেন, ক্যাম্পকে নিরাপদ করতে প্রশাসন সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক এটা আমাদের দাবি। এখন প্রশাসনের টহল ও অভিযান বেড়েছে, এতে অনেক অপরাধী পালিয়েছে। আমরা চাই, ক্যাম্পে একটু শান্তিতে বসবাস করতে।

যৌথ অভিযানে থাকা টেকনাফস্থ র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর স্কোয়াড্রন কমান্ডার এএসপি মাহতাব বলেন, যৌথ অভিযানের মূল উদ্দেশ্যে হল মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকানো। যেসব তথ্য পাচ্ছি সেসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সব বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং যাব। বিশেষ করে, আরসাসহ অন্যন্যা সন্ত্রাসীগুলো থেকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মুক্তি ও স্বস্তি দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হবার কারণে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতা রোধ এবং অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য যৌথ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যৌথ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারিরা আইনের আওতায় আসলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে।

মো. আমির জাফর বলেন, প্রতিদিনই এপিবিএন সদস্যরা নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করছে। আর কিছুদিন পরপর বা এক সপ্তাহে দুদিন করে এপিবিএন, জেলা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888